চামড়ার দাম ব্যাপক ভাবে কমে যাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে প্রতি বছরই মানুষ বিপাকে পড়েন। নামমাত্র দামে ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া গছিয়ে দিতে হয়। এই টাকা দিয়ে আসলে কারও কোনো উপকার হয় না। এই কারণে দেখা যায় অনেকে চামড়া ফেলে দেন বা মাটিতে পুঁতে রাখেন।
কিন্তু অনেকে জানেন না পশুর চামড়া খাওয়া যায়। পশুর চামড়া যে হালাল এতে প্রায় সব আলেমই একমত। ফলে আপনি চাইলে নিশ্চিন্তে চামড়া খেতে পারেন।
চামড়া খাওয়ার কথা শুনেই অনেকে অবাক হচ্ছেন এই জিনিস কীভাবে খাবেন?
পশুর চামড়া কিন্তু অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবার। তাই চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার জন্য এবং একটি চামড়া থেকে অন্তত ২০ থেকে ৩০ কেজি খাদ্য অপচয় রোধ করার জন্য সেটি খাওয়া যেতে পারে ।
আমাদের দেশে গরু–ছাগলের বট (নাড়ি–ভুড়ি) খাওয়ার ব্যাপক চল আছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা প্রভৃতি এলাকায় গরুর মাথার চামড়া রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় পশুর চামড়া খাওয়া হয়।
চামড়া রান্না করা কিন্তু সহজই। চামড়াটি মেঝেতে ভালো করে ছড়িয়ে দিন। লোমের দিকটি উপরে রাখুন। এরপর গরম পানিঢেলে স্টিলের চামচ বা ধারযুক্ত জিনিস (চাকু বা চাপাতি) দিয়ে আঁচড় দিলে পশমগুলো সহজে উঠে গিয়ে পরিষ্কার চামড়া বেরিয়ে আসবে।
লোম পরিষ্কার করার পর চামড়ার নিচের অংশ পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরা করতে হবে। ভালোভাবে ধুয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ হলে, প্রয়োজনীয় মশলা দিয়ে মাংসের মতো করে রান্না করতে হয়। নরম ও সুস্বাদু করতে চাইলে হালকা আঁচে কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে রান্না করতে হবে।
একটি চামড়া থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি কিংবা এর থেকে বেশি পরিমাণ মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া চামড়া দিয়ে হালিম, চটপটি ইত্যাদি রান্না করলেও বেশ মজাদার হয়। আর গরম গরম ভাত ও রুটি খাওয়ার মজাই আলাদা।
গরুর চামড়া রান্না করবেন যেভাবেঃ
- প্রথমে গরুর চামড়াটি কংক্রিটের মেঝে বা তক্তার ওপর ছড়িয়ে দিন।
- এবার চামড়ার লোমের অংশে গরম পানি ঢেলে সঙ্গে সঙ্গে স্টিলের চামচ বা চাপাতি দিয়ে আঁচড় দিন। দেখবেন খুব সহজেই পশম গুলো উঠে যাবে।
- লোম উঠে যাওয়ার পর চামড়ার নিচের অংশ পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরা করতে হবে।
- এরপর ভালোভাবে ধুয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ হলে, প্রয়োজনীয় মশলা দিয়ে মাংসের মতো করে রান্না করতে হয়।
- নরম ও ভালো স্বাদ পেতে মসলা মিশিয়ে হালকা আঁচে অন্তত তিন ঘণ্টা রান্না করুন।
গরুর চামড়ার পুষ্টি মান
এটি প্রায়শই বলা হয় যে গরুর চামড়ায় কোন ও পুষ্টির মূল্য নেই। আসলে এটি ঠিক নয়।
১০০ গ্রাম সেদ্ধ চামড়াতে প্রায় ২২৫ কিলোক্যালরি শক্তি, ৬.৮০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, প্রায় ৪৩.৯ গ্রাম পানি, ৪৬.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১.০৯ গ্রাম ফ্যাট এবং ০.০২ গ্রাম ফাইবার থাকে।
মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট গুলির মধ্যে, এটি স্বল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম (৬১ মিলিগ্রাম), আয়রন (৪.৩ মি.গ্রা), ম্যাগনেসিয়াম (১২মি.গ্রা), ফসফরাস (৩৬ মি.গ্রা) এবং জিংক (৬.৭৯ মি.গ্রা) দ্বারা গঠিত।
গরুর চামড়ার উপাদান
চর্বিঃ বেশি পরিমাণে চর্বি গ্রহণ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, বিশেষত কোলন এবং স্তনের ক্যান্সারগুলি। এটি কমচর্বিযুক্ত খাবার এ জাতীয় রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
ফাইবারঃ ডায়েটারি ফাইবার হ’ল অজীর্ণ পুষ্টি যা পাচন তন্ত্রের সঠিক ক্রিয়াকলাপকে সহায়তা করে। এটি ডায়েটারি ফাইবারের একটি ভাল উৎস যা হজম এবং নিয়মিত অন্ত্রের গতি বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দেয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যার মাধ্যমে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
ক্যালসিয়ামঃ ১০০ গ্রাম সিদ্ধ চামড়াতে প্রায় ৬১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম প্রয়োজনীয় পুষ্টি শক্ত হাড় বজায়রাখতে এবং অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে সহায়তা করে। এটি হাড় এবং দাঁত গঠনে সহায়তা করে।
আয়রনঃ গরুর চামড়ায় উপস্থিত আরও একটি পুষ্টি হ’ল আয়রন। রক্তের লোহিত কণায় উপস্থিত হিমোগ্লোবিন একটিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শরীরের চারদিকে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।
ম্যাগনেসিয়ামঃ ম্যাগনেসিয়াম দেহে স্বাভাবিক হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। বেশিরভাগ লোকেরা ডায়েট থেকে ম্যাগনেসিয়াম পান তবে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে এমন ক্ষেত্র।